Wellcome to National Portal

উপজেলা সমবায় কার্যালয়, উজিরপুর, বরিশাল এর ওয়েব পোর্টালে আপনাকে স্বাগতম।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা এর ৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিটি উপজেলায় ১টি করে “ বঙ্গমাতা মহিলা সমবায় সমিতি” নামে নামকরণের অনুমতি প্রদান

মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ঘটনাপুঞ্জ

ঘটনাপুঞ্জ

সমবায়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নে সমবায়ের গর্ব করার মত সুদীর্ঘকালের ঐতিহ্য এবং ইতিহাস রয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে সমবায় আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। ১৮২১ সালে রবার্ট ওয়েন ইংল্যান্ডের ‘নিউ লানার্ক’ নামক শহরে ও তার আশেপাশের শ্রমিকদের সংগঠিত করে সমবায় গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। সমবায়ের মাধ্যমে নিজস্ব সঞ্চয় সংগ্রহ করে শ্রমিকরা তাদের ভাগ্যোন্নয়নে ব্রতী হয়। রবার্ট ওয়েনের এ সমবায় কার্যক্রম প্রথম দুই দশকে বেশ সফলতা প্রদর্শন করে। পরে ব্যবস্থাপনার ত্রুটিজনিত কারণে চল্লিশের দশকে এসে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। রবার্ট ওয়েন যেহেতু আধুনিক সমবায়ের কাঠামোগত ভিত রচনা করেছিলেন তাই তাঁকে ‘আধুনিক সমবায়ের জনক’ (Father of Modern Cooperatives) বলে আখ্যায়িত করা হয়।

প্রকৃতপক্ষে, আধুনিক সমবায় আন্দোলনের জয়যাত্রা শুরু হয় ১৮৪৪ সালের ১৪ আগস্ট তারিখে ইংল্যান্ডের ম্যানচেষ্টারের নিকটবর্তী রচডেল (Rochdale) নামক একটি ছোট্ট শহরে। রচডেলের মাত্র ২৮ (আটাশ) জন বুদ্ধিমান শ্রমিক আত্ম-প্রত্যয় ও আত্ম-প্রচেষ্টায় স্বাবলম্বী হওয়ার ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠা করে ‘রচডেল অগ্রণীদের সমতাবাদী সমবায় সমিতি।’ (Rochdale Pioneers Equitable Cooperative Society)।

রচডেলের পরবর্তীতে ১৮৯৫ সালের আগস্ট মাসে সফলভাবে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠন করা হয় যার নাম দেওয়া হয় International Cooperative Alliance । উক্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা সমবায়ীদের ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করে। এর পরে স্পেনের বাস্ক প্রদেশে ম্যন্ড্রাগণ সমবায় কর্পোরেশন নামে একটি সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় যা অদ্যবধি সমবায়ের সবচেয়ে সফল উদাহরণের অন্যতম।

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয় উপ-মহাদেশে প্রথম সমবায় আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। এ সময়ে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ লোক গ্রামে বাস করত। কৃষিই ছিল জনগণের জীবিকার একমাত্র উপায়। 

১৮৭৫ সালে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এই বিদ্রোহের মূলে ছিল কৃষি ঋণের অভাব, মহাজনী ঋণের চক্রবৃদ্ধিজনিত উচ্চ সুদের হার, কৃষকদের ক্রমবর্ধমান দারিদ্র। এ প্রেক্ষিতে ১৯০১ সালে ইন্ডিয়ান ফেমিন কমিশনের সুপারিশ মতে এবং তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন কর্তৃক গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট (লর্ড এডওয়ার্ড , স্যার নিকলসন ও ডুপার নিক্স) কমিটির সুপারিশ অনুসারে ১৯০৪ সালে তদানীন্তন বৃটিশ ভারতের গভর্ণর জেনারেল লর্ড কার্জন ‘সমবায় ঋণদান সমিতি আইন,১৯০৪’ (Cooperative Credit Societies Act-1904) জারী করেন এবং তদানীন্তন ভারত সরকার পুনরায় নতুন করে ‘সমবায় সমিতি আইন-১৯১২’ (Cooperative Socities Act-1912) জারী করেন। উক্ত আইনে ক্রেডিট ও নন-ক্রেডিট সমবায় সমিতি গঠন এবং সসীম ও অসীম দায় বিশিষ্ট সকল প্রকার সমবায় সমিতি গঠনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাছাড়া এই আইনে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শীর্ষ সমিতি বা ব্যাংক গঠন করার বিধান ও সন্নিবেশ করা হয়। ফলে দেশের সর্বত্র কৃষিক্ষেত্রে ও অকৃষিক্ষেত্রে সসীম ও অসীম দায়-বিশিষ্ট বিভিন্ন প্রকার সমবায় সমিতি গড়ে উঠতে শুরু করে।

ভারতবর্ষের কো-অপারেটিভগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উপায় উদ্ভাবনের জন্য স্যার এডওয়ার্ড ম্যাকলেগানকে প্রধান করে ‘ ইমপেরিয়াল কো-অপারেটিভ ইন ইন্ডিয়া’ গঠিত হয়। ১৯১৫ সালে ম্যাকলেগান কমিটি সুপারিশ দাখিল করেন। এই কমিটির প্রতিবেদনকে ভারতের জন্য ‘সমবায়ের বাইবেল’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

১৯১২ সালের আইনের আওতায় ১৯১৮ সালে ‘বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল কো-অপারেটিভ ফেডারেশন গঠনের মাধ্যমে প্রাদেশিক সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। ১৯২২ সালে তা ‘বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল ব্যাংক’ নাম ধারণ করে।

তৎকালীন ভারত সরকার ১৯১৯ সালে সমবায়কে প্রাদেশিক বিষয়ে পরিণত করে। প্রাদেশিক সরকারের অধীনে একজন সমবায় বিষয়ক মন্ত্রীও নিয়োগ করা হয়। তবে তখনও ১৯১২ সালেল সমবায় সমিতি আইন অনুযায়ী সমবায়ের কর্মকান্ড পরিচালিত হয়।

বিশের দশকে পাট ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত সমবায়গুলো এক উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে। এ গুলোর মাধ্যমে ‘বিক্রয় ও সরবরাহ সমিতি’ এবং ‘কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ সমিতি’ পাট ব্যবসায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এ গুলোর কেন্দ্রীয় সমিতি ‘বেঙ্গল কো-অপারেটিভ হোলসেল সোসাইটি ১৯২৬ সাল থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত পাট ব্যবসায়ে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে।

সমবায় আন্দোলনকে পূন:চাঙ্গা করে তোলার লক্ষ্যে প্রাদেশিক সরকার ১৯৪০ সালে ‘বঙ্গীয় সমবায় সমিতি আইন-১৯৪০’ জারী করে। ১৯৪২ সালে উক্ত আইনের বিশ্লেষণ সহ ‘সমবায় নিয়মাবলী -১৯৪২’ প্রকাশিত হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় দেশে দ্রব্যমূল্য অত্যাধিক বেড়ে যায়। ১৯৪৩ সালে প্রদেশব্যাপী দেখা দেয় এক মহা-দুর্ভিক্ষ। অপরদিকে ১৯৪৫ সালে দেশব্যাপী বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন দানা বেধেঁ ওঠে। শুরু হয় সর্বত্র হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা-হাঙ্গামা। ফলে সমবায় আন্দোলন এক বিরাট বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সমবায় আন্দোলনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পূর্ব পাকিস্তানে তখন ২৬,০০০ এর ও বেশি সমবায় সমিতি বিরাজমান থাকলেও এগুলোর অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ সমিতিই পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে অবসায়নে দেয়া হয়।

সরকার ও সমবায়ীদের যৌথ উদ্যোগে ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে সরকার সমবায় সমিতিগুলোর ঋণ কার্যক্রম পূনরায় চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। গ্রামীণ সমিতিগুলোর পরিবর্তে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ইউনিয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি গঠন করা হয়। এই ইউনিয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতিগুলোর মাধ্যমে তখন কৃষকদের তখন সার, বীজ কীটনাশক ডিজেল সরবরাহ করা হতো। রাসায়নিক সার ব্যবহারে সমিতিগুলো তখন জনগণকে উদ্বুদ্ধ করত। আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির চাষাবাদ ব্যবস্থার প্রচলনে সমিতিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পঞ্চাশের দশকে পূর্ব পাকিস্তান কো-অপারেটিভ জুট মার্কেটিং সোসাইটি ও এর অধীনস্থ পাট ক্রয় সমিতি পাট ব্যবসায়ে আশাতীত সাফল্য অর্জন করে। বিদেশে পাট রপ্তানীতে সমবায় তখন পঞ্চম স্থান অধিকার করে।

১৯৫৮ সালে পাকিস্তান স্টেট ব্যাংক এ অঞ্চলের সমবায়গুলোকে কৃষি ঋণ দেয়া শুরু করে।ষাটের দশকে প্রথম ও দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বেশ কয়েকটি সমবায় উন্নয়ন প্রকল্প গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়। ফলে সমবায় আন্দোলনে নতুন উদ্যম ও গতির সঞ্চার হয়।

১৯৫৬ সালে ড. আখতার হামিদ খান প্রায়োগিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কুমিল্লার কোটবাড়ীতে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর উদ্যোগে ১৯৬০ সালে কুমিল্লার কোতয়ালী থানায় ‘দ্বি-স্তর সমবায় পদ্ধতি’ চালু করা হয়। গ্রাম পর্যায়ে প্রাথমিক সমবায় সমিতি এবং থানা পর্যায়ে কোতয়ালী থানা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ এসোসিয়েশন (KTCCA) গঠন করার মাধ্যমে উক্ত কর্মসূচি চালু করা হয়। ১৯৬৫ সালে ‘কুমিল্লা জেলা সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি’ (CDIRDP) কুমিল্লা জেলার ২২ টি থানায় চালু করা হয়।

১৯৬০ সালে সমবায় অধিদপ্তর হতে মাসিক ‘সমবায়’ এবং ইংরেজি ষান্মাসিক ‘কো-অপারেশন’ পত্রিকাদ্বয়ের প্রকাশনা শুরু হয়। ১৯৬০ সালে ঢাকার গ্রীন রোডে বাংলাদেশ সমবায় কলেজ স্থাপিত হয়।

১৯৬১ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সমবায় ইউনিয়ন) আন্তর্জাতিক মৈত্রী সংস্থার (আইসিএ) সদস্যপদ লাভ করে।

১৯৬২ সালে প্রথমবারের মত ‘জাতীয় সমবায় নীতিমালা’ গৃহীত ও প্রচারিত হয়। ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ সমবায় কলেজ ঢাকার গ্রীন রোড হতে কুমিল্লার কোটবাড়ীতে স্থানান্তর করা হয়।

১৯৬৭, ৬৮, ৬৯ সনের দিকে সারা জেলাব্যাপী ছোট এলাকা ভিত্তিক কৃষকদেরকে সংগঠিত করে প্রতিষ্ঠিত হয় কয়েক হাজার কৃষি সমবায় সমিতি। তৎকালীন সরকার কর্তৃক গৃহীত ইরিগেশন প্রোগ্রাম এবং এক্সিলারেটেড রাইস প্রোডকশন প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা হয়েছিল সমিতিগুলোর মাধ্যমে। প্রতিটি থানায় সার্কেল অফিসারের নেতৃত্বে থানা সমবায় অফিসার, থানা কৃষি অফিসার, বি.এ.ডি.সির থানা ইরিগেশন অফিসার ও থানা ফার্টিলাইজার ইনসপেক্টর এবং থানা বীজ অফিসার সমন্বয়ে এ প্রকল্পগুলো পরিচালিত হতো। মুখ্য ভূমিকা ছিল থানা সমবায় অফিসারের।

১৯৭১ সালে ‘সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি’ (IRDP) চালু করার মাধ্যমে কুমিল্লাস্থ দ্বি-স্তর সমবায় পদ্ধতির কার্যক্রম প্রদেশব্যাপী ছড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচির সদর দপ্তর ঢাকায় স্থাপন করে একজন নির্বাহী পরিচালকের অধীনে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বেশ কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ করে উক্ত প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়।

স্বাধীনতার পর সমবায়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের ১৩(খ) অনুচ্ছেদে সমবায়কে মালিকানার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পরপরই বাঙালী জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবায়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে দেশের প্রত্যেক ইউনিয়নে ইউনিয়নভিত্তিক বহুমুখী সমবায় সমিতির মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে সহজে এবং সুলভ মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য এবং কৃষি উপকরণ পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। তাছাড়া, দেশের প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামে কৃষি সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হয়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর একটি বক্তব্য এখানে প্রণিধানযোগ্য। ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিনি এক ভাষণে বলেছিলেন ‘ ………কিন্তু একটা কথা এই যে নতুন সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি, তাতে গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করা হবে। ভুল করবেন না। আমি আপনাদের জমি নেব না। ভয় পাবেন না যে জমি নিয়ে যাব। তা নয়। পাঁচ বৎসরের প্লানে বাংলাদেশের পঁয়ষট্টি হাজার গ্রামে একটি করে কো-অপারেটিভ হবে। প্রত্যেকটি গ্রামে এই কো-অপারেটিভের সদস্য হতে হবে। এগুলি বহুমুখী কো-অপারেটিভ হবে। প্রত্যেকটি বেকার, প্রত্যেকটি মানুষ- যে কাজ করতে পারে, তাকেই কো-অপারেটিভের সদস্য হতে হবে। পয়সা যাবে তাদের কাছে, ফার্টিলাইজার যাবে তাদের কাছে। আস্তে আস্তে ইউনিয়ন কাউন্সিলে যারা টাউট আছেন তাদেরকে বিদায় দেওয়া হবে ……………।’ কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট পৃথিবীর এক নিকৃষ্টতম হত্যাকান্ডের মাধ্যমে বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ঘাতকেরা নস্যাৎ করে দেয়। পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় আসে। তারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করে নাই। যার ফলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ইউনিয়ন ভিত্তিক সমবায় সমিতি এবং কৃষি সমবায় সমিতিসমূহের কার্যক্রম অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়ে।

অন্যদিকে, সমবায় আন্দোলনে দ্বি-মুখী ধারা প্রবাহিত হয়। একদিকে সমবায় বিভাগ পরিচালিত কার্যক্রম কৃষি ক্ষেত্র ছাড়াও অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়ে। যেমন, মৎস্য চাষ, ইক্ষু চাষ, তাঁত শিল্প, হস্ত শিল্প, দুগ্ধ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদির নাম এখানে উল্লেখ করা যায়। অপরদিকে আইআরডিপি’র দ্বি-স্তর বিশিষ্ট সমবায় কার্যক্রম প্রধানত কৃষি ক্ষেত্রে জোরেসোরে চালু হয়। আইআরডিপি তার মূল প্রকল্পের অধীনে গ্রাম পর্যায়ে কৃষক সমবায় সমিতি এবং থানা পর্যায়ে থানা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ এসোসিয়েশন গঠনের মাধ্যমে পল্লীর জনগণকে সংগঠিত করতে শুরু করে। ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের দুধের চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে সমবায়ের ভিত্তিতে দুগ্ধ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লি: (মিল্কভিটা) প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৭৫ সালে সমবায় বিভাগ যানবাহন ও পরিবহন সমবায় সমিতি গঠনের দিকে মনোনিবেশ করে। ফলে বাংলাদেশ গণপরিবহন চালক সমবায় সমিতি ও পরে বাংলাদেশ অটো রিকশা চালক সমবায় সমিতি গড়ে ওঠে। আইআরডিপি মহিলা উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে মহিলা সমবায় সমিতি গঠন শুরু করে।

১৯৮২ সালে সরকার এক অর্ডিনেন্সএর মাধ্যমে আইআরডিপি এর স্থলে ‘বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে তাকে একটি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায় পরিণত করে। একই সালে সমবায় বিভাগ ‘বাংলাদেশ ট্রাক চালক সমবায় ফেডারেশন’ গঠন করে পরিবহন সমবায়ের কার্যক্রম আরও জোরদার করে। ১৯৮৩ সালে সমবায় বিভাগের অধীনে ‘বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ হাউজিং ফেডারেশন’ গঠনের মাধ্যমে হাউজিং সমবায় সমিতি গঠনের চেষ্টা চালায়।

১৯৮৩ সালে দেশের ১৩ টি বৃহত্তর জেলায় ‘পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প-২’ এর কার্যক্রম বিআরডিবি’র মাধ্যমে চালু করা হয়। এর একটি অংশ ‘অডিট ক্ষমতা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পটি সমবায় বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়ন শুরু হয়। বিআরডিবি পরিচালিত সমিতিগুলোর অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য উক্ত প্রকল্পের অধীনে বেশকিছু অডিট কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।

১৯৮৪ সালে বিআরডিবি কর্তৃক ‘পল্লী দরিদ্র কর্মসূচি’ চালু করা হয়। এর আওতায় গ্রাম পর্যায়ে প্রথমে বিত্তহীন সমবায় সমিতি এবং পরে মহিলা বিত্তহীন সমবায় সমিতি গঠনের কাজ শুরু করা হয়।

বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ১৯৪০ সালের পুরাতন বঙ্গীয় সমবায় আইন বাতিল করে ‘সমবায় সমিতি অধ্যাদেশ-১৯৮৪’ জারী করেন। উহা ১৪ জানুয়ারি ১৯৮৫ তারিখে সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়।

একই সালে সরকার সমবায় বিভাগের চাকুরি বিসিএস ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ সমবায় কলেজ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়।

১৯৮৭ সালে ২০ জানুয়ারি ‘সমবায় সমিতি নিয়মাবলী -১৯৮৭’ গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জারী করা হয়। এতে নির্বাচন সংক্রান্ত সমবায়ের নতুন বিধিমালাসহ অনেক বিধি প্রণয়ন ও সংশোধন করা হয়।

১৯৮৯ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মত সমবায় নীতিমালা প্রবর্তন করা হয়। সমবায় বিভাগের আওতাধীন আটটি আঞ্চলিক সমবায় ইন্সটিটিউট ‍উন্নয়ন প্রকল্পটি এ বছরই জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত হয়।

২০০১ সালে প্রথমবারের মত বাংলায় সমবায় আইন জারী করা হয়। ২০০২ সালে ২০০১ সালের সমবায় আইনের কতিপয় ধারা সংশোধন করে সংশোধিত আইন, ২০০২) জারী করা হয়। সমবায় সমিতি আইন, ২০০১ ও সংশোধিত আইন ২০০২ এর সমর্থনে ২০০৪ সালে সমবায় সমিতি বিধিমালা, ২০০৪ জারী করা হয়। দারিদ্রমুক্ত আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ায় সমবায় উদ্যোগকে উৎসাহ প্রদান এবং গণমুখী সমবায় আন্দোলনের দিকনির্দেশনার প্রয়োজনে ১৯৮৯ সালে প্রণীত সমবায় নীতিমালাকে যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় সমবায় নীতিমালা-২০১২ প্রণয়ন করা হয়। ২০১৩ সালে সমবায় আইনকে অধিকতর সংশোধন করে সংশোধিত সমবায় আইন, ২০১৩ জারী করা হয়।

এ সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় সমবায় আন্দোলন অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে। কৃষি ও ভোগ্য পণ্য উৎপাদন ও বিপণন, মৎস্য চাষ, ইক্ষু চাষ, দুগ্ধ উৎপাদন, প্রকিয়াজতকরণ এবং বিপণন, তাঁত শিল্প, হস্তশিল্প, মৃতশিল্প, চামড়া শিল্প, যানবাহন, আবাসন, মৌচাষ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমবায় সমিতিগুলো বিচরণ করছে। সমবায় গুলো দেশের গন্ডি পেরিয়ে তাদের উৎপাদিত পণ্য এখন বিদেশেও রপ্তানী করছে। দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরে সংগঠিত এ সব সমিতির সংখ্যা বর্তমানে প্রায় পৌনে দুই লক্ষ। দেশের এক কোটিরও বেশি মানুষ এ সকল সমিতির সদস্য পদ গ্রহণ করে সমবায় আন্দোলনকে জোরদার করেছে। সমবায় আন্দোলন দেশের একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।